গুপ্ত যুগের আগে বাংলার ধারাবাহিক ইতিহাস রচনা করা বেশ কঠিন ব্যাপার। উপাদানের অভাবই এর প্রধান কারণ। দেশী বিদেশী ইতিহাসবিদদের বিক্ষিপ্ত খন্ড খন্ড উক্তি ও কিছু প্রত্নতাত্ত্বিক উপাদানের উপর নির্ভর করে এ অঞ্চলের প্রাচীন ইতিহাস লেখা হয়েছে। কিন্তু কিছু কিছু বিষয় এতই অস্পষ্ট যে সঠিক ইতিহাসের সাথে যোগসূত্র ঘটানে বড়ই কঠিন ব্যাপার।

সর্বপ্রথম কোন সময় এ অঞ্চলে লোক বসতি শুরু হয় তা সঠিক করে বলা কঠিন। বাংলাদেশের উত্তর-পশ্চিম, উত্তর-পূর্ব ও দক্ষিণ পূর্ব সীমান্ত পার্বত্যঞ্চলে ও তৎসংলগ্ন ভূ-ভাগ এবং দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চল অপেক্ষকৃত প্রাচীন। এই প্রাচীন ভূ-ভাগেরই বিভিন্ন এলাকায় প্রাচীন মানুষের প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন পাওয়া গেছে। ১৯৬২/৬৩ খৃষ্টাব্দে পশ্চিম বঙ্গ সরকারের প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ কর্তৃক পশ্চিম বঙ্গের বীরভূম ও বর্ধমান জেলার অজয়, কনুর ও কোপাই নদীর তীরে প্রত্নতাত্ত্বিক খনন কার্যের ফলে এ অঞ্চলে তাম্র প্রস্তর যুগের নিদর্শন আবিষ্কৃত হয়েছে। এই আবিষ্কারের ফলে, বিশেষ করে বর্ধমান জেলায় অজয় নদীর দক্ষিণ তীরে আবিষ্কৃত পান্ডু নামে এক রাজার ঢিবি পাওয়া গেছে। এখানে আবিষ্কৃত নিদর্শনগুলির ওপর নিভর করে গবেষকগণ একবাক্যে স্বীকার করেছেন যে, খৃষ্টের জন্মের প্রায় দেড় হাজার বছর পূর্বে বাংলার দক্ষিণ-পশ্চিম অঞ্চলে এক উন্নত সভ্যতা গড়ে উঠেছিল। পান্ডু রাজার ঢিবিতে ষ্টীটাটি পাথরের কতকগুলি চিহ্ন ও ভৌতিক একটি গোলাকার সীল পাওয়া গেছে। মনে করা হয় যে, সীলটির খোদিত চিহ্নসমূহ চিত্রাক্ষর এবং ভূ-মধ্যসাগরীয় ক্রীটদ্বীপের প্রায় সাড়ে তিন হাজার বছর পূর্বে নির্মিত। এই সীল ও অন্যান্য নিদর্শনসমূহ হতে অনুমান করা হয় যে, মানব সভ্যতার প্রাচীন আবাসস্থল ক্রীট দ্বীপের সাথে বাণিজ্যিক সম্পৃক্ততা ছিলো। এ থেকে প্রমাণিত হয় পান্ডুরাজ অত্যন্ত প্রতাপশালী ছিলেন এবং এই জেলাসহ দক্ষিণে আরো অনেক দূর পর্যন্ত তাঁর কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠিত ছিলো।

অজয় নদীর তীরে প্রাপ্ত পোড়ামটির তৈরি বিভিন্ন মূর্তির সৌন্দর্যসমূহ এক সময় জনসাধারণকেও মুগ্ধ করেছিলো বলে প্রমাণ মেলে। এর প্রকৃষ্ট উদাহারণ জেলার লোহাগড়া কলেজের পিছনে অবস্থিত প্রাচীন জোড় বাংলা মন্দির এবং উত্তর দিকে ৫০০/৬০০ হাত দূরে একটি জঙ্গলের মধ্যে অবস্থিত সতীশচন্দ্র দত্তের স্মৃতি মন্দির। আশ্চর্যের বিষয় এই যে, মন্দিরের টেরা বোটা টালীগুলি কালের প্রভাবে এখনও নোনা ধরেনি এবং বিশেষ ক্ষয় প্রাপ্তিও হয়নি। এগুলি আজ যে কোন প্রাচীন স্থাপত্যশিল্পের দুর্মূল্য জিনিস, এটা নিঃসন্দেহে বলা যেতে পারে।

আর্যগণ যখন সিন্ধু সভ্যতার জনক দ্রাবিড়দের পরাভূত করে পাকিস্তান দখল করে, এর বেশকিছু পরে আর্যগণ এ অঞ্চলের দিকে ধাবিত হয় এবং উপনিবেশ স্থাপন করে। পুরানো মাহাভারত ও পরবর্তী ব্রাহ্মণ্য সাহিত্যে আমাদের দেশের বিভিন্ন জাতির কথা উল্লেখ আছে। এই সমস্ত গ্রন্থে আর্য প্রভাব বিস্তারের নানান কাহিনী পাওয়া যায়।

খৃষ্টপূর্ব চতুর্থ শতকে গ্রীক ঐতিহাসিকে রেলেনী হতে নড়াইল তথা গোটা বাংলার অবস্থা সম্বন্ধে স্পষ্টতর ধারণা পুনরুদ্ধার করা সম্ভব। তাদের লেখনী থেকে জানা যায় আলেজন্ডার দি গ্রেট যখন ভরত আক্রমণ করেন তখন বাংলাদেশে এক মহাপরাক্রমশালী সম্রাট ছিলেন, যাঁর ভয়ে ভীত হয়ে আলেকজান্ডার বিশ্ববিজয়ের পরিকল্পনা ত্যাগ করে দেশে ফিরে যান। গ্রীক ঐতিহাসিকদের বর্ণনা মতে এই রাজ্যের নাম হলো ‘গঙ্গরিডাই’। বলা বাহুল্য নড়াইল জেলা তখন গঙ্গরিডাই সাম্রাজ্যেরই অন্তর্ভুক্ত ছিলো।

বিদেশী লেখকগণের কয়েকটি সম্ভ্রমসূচক উক্তি ছাড়া এর পরবর্তী যুগের ইতিহাস খুবই অস্পষ্ট। খৃষ্টপূর্ব তৃতীয় অব্দ হতে খ্রীষ্টীয় তৃতীয় শতাব্দী পর্যন্ত নড়াইল তথা গোটা বাংলার ইতিহাসই অন্ধকারাচ্ছন্ন।

গঙ্গরিডাই সাম্রাজ্য কিভাবে ধ্বংস হলো তার দলিল আমাদের হাতে না থাকলেও খ্রীষ্টপূর্ব ৩২৩ অব্দের পরে যে এটা ধ্বংস হয়েছিলো তা ঠিক। চন্দ্র গুপ্তের নেতৃত্বে মৌর্য্য বংশ যখন সাম্রাজ্যবাদী শক্তি হিসেবে দেখা দেয় তখন নড়াইল জেলা তথা গোটা বাংলা মৌর্য সাম্রাজ্যভুক্ত হয়। সমসাময়িক চৈনিক পরিব্রাজক উয়ান চোয়াং এর স্বপক্ষে সাক্ষ্য রেখে গেছেন।

মৌর্য্য সেনাপতি পুষ্যমিত্র সর্বশেষ মৌর্য্য সম্রাট বৃহদ্রুকে হত্যা করলে শুঙ্গ বংশের প্রতিষ্ঠিত করতে পেরেছিল সে সম্বন্ধে পুরাপুরি ধরণা না করতে পারায় মনে করা হয়ে থাকে যে, ঐ সময় থেকে নড়াইল জেলা ভূ-স্বামী কর্তৃক শাসিত হতো।

মূলতঃ মৌর্য্যত্তোর যুগে এতদঞ্চলের ইতিহাস অন্ধকারাচ্ছন্ন। তবে যেহেতু বগুড়া জেলার মহাস্থানগড়ের ধ্বংস্তুপে কুষাণ সম্রাট কনিঙ্কের মূর্তি চিহ্নিত একটি সুবর্ণ মুদ্রা আবিষ্কিৃত হয়েছে, সেহেতু অনুমান করা হয় যে এ অঞ্চলও কুষাণ সাম্রাজ্যের অন্তর্ভূক্ত ছিল।
খৃষ্টীয় প্রথম ও দ্বিতীয় শতাব্দীতে বাংলাদেশের অবস্থা সম্বন্ধে কিছু তথ্য গ্রীক ও লাতিন উৎসসমূহে পাওয়া যায়। পেরিপ্লাস গ্রন্থ ও টলেমীর বিবরণ হতে আমরা জানতে পারি যে, এই সময়ে বাংলার স্বাধীন গঙ্গরিডাই রাজ্য তখনো বেশ প্রবল ছিল। বাংলাদেশের নদী মোহনায় ব-দ্বীপ অঞ্চলে অবস্থিত এই রাজ্যের রাজধানী শহর ‘গঙ্গ’ তখন একটি বিখ্যাত বন্দর ছিলো। বিশ্বের বিষ্ময় বাংলার গৌরব ঢাকার সুক্ষ্ম মসলিন কাপড় এই বন্দর হতে সারা বিশ্বে রফতানী হতো। টলী এই গঙ্গ বন্দরের অবস্থিতি তাম্রলিপি বন্দরের আরো দক্ষিণ পূর্বে কুমার নদীর মোহনায় বলে উল্রেখ করেছেন। রাজধানী ‘গঙ্গে’ থেকে পরে তাম্রলিটত স্থানান্তরিত হয়। প্রকৃতপক্ষে গ্রীক লাতিন লেখকগণের গঙ্গরিডাই এবং মৌর্য্য শাসনের পর হতে খৃষ্টীয় চতুর্থ শতাব্দীতে গুপ্ত রাজবংশের প্রতিষ্ঠা পর্যন্ত নড়াইল জেলার ইতিহাসের সুস্পষ্ট চিত্র রয়েছে।

গুপ্তযুগে জেলার পূর্ব সীমান্ত মধুমতি নদী পর্যন্ত গুপ্ত সাম্রাজ্যের অধিন ছিলো। এটা ছিলো ৩৪০ খৃষ্টাব্দ হতে ৩৭৫ খৃষ্টাব্দ পর্যন্ত সমুদ্রগুপ্তের শাসনকাল। ৪০/৫০ বছর পূর্বে নড়াইল জেলার উত্তরদিকে অবস্থিত পার্শ্ববর্তী উপজেলা মুহাম্মদপুরে মধুমতি নদীর সন্নিকটে একটি পুকুর খননকালে গুপ্তদের কয়েকটি মুদ্রা আবিষ্কৃত হয়। এ থেকে অনুমান করা হয়, ঐ সময় এই সকল অঞ্চল গুপ্ত সাম্রাজ্যের অন্তর্ভূক্ত ছিলো। এরপর মহারাজা শশাংক ৬০০ খৃষ্টাব্দে বাংলার শাসনদন্ড ধারণ করেন। তাঁর রাজধানী ছিল কর্ণসুবর্ণ নগর (মুর্শিদাবাদ), অনেকের মতে লক্ষণাবর্তী। তারপর সম্রাট হর্ষবর্ধন শশাংককে পরাভুত করে প্রাচীন এ বাংলা রাজ্য দখল করেন। যশোর তথা বর্তমান নড়াইল অঞ্চল প্রথমে রাজা শশাংক এবং পরে হর্ষবর্ধনের সাম্রাজ্যভুক্ত ছিলো। এরপর প্রায় ১৫০ বছরকাল ব্যাপী নড়াইল জেলা অঞ্চল ক্ষুদ্রবৃহৎ ভূ-স্বামী কর্তৃক শাসিত হয়। বাহুবলে যে যেখানে যতটুকু ভূ-খন্ডের ওপর স্বীয় কর্তৃত্ব সু-প্রতিষ্ঠিত করতে পারতো, সে সেই ভূ-খন্ডের রাজা বলে স্বীকৃত হতো। এজন্যে এই যুগকে বাংলার ইতহাসে ‘মাৎসান্যায়’ বলে উল্লেখিত হয়েছে। ঐ সময়কার এতদঞ্চলের দু’জন রাজার সন্ধান পাওয়া যায়। এদের একজন হলেন হবখালি ইউনিয়নের নয়াবাড়ীর পাতালভেদী রাজা এবং অপরজন হলেন উজিপুর-কাশিয়াড়া গ্রামের রাজা। রাজা থাকলেও রাজ্যে শান্তি ছিলো না। মারামারী, হানাহানী কাটাকাটি সর্বদা ভূ-স্বামীদের মধ্যে লেগেই থাকতো। রাজ্যের মানুষ সর্বক্ষণ ভীত সন্ত্রস্ত অবস্থায় থাকাতো। মৃত্যুর অপেক্ষায় অসহায় জীবনযাপন করতো।

এই অবস্থা থেকে নিষ্কৃতি লাভের জন্য কতগুলি জ্ঞানদীপ্ত শান্তিপ্রিয় ক্ষুদ্ররাজা একত্রে মিলিত হয়ে পাল রাজবংশের প্রতিষ্ঠাতা গোপালকে সার্বজনীন রাজা হিসেবে গ্রহণ করে নেয় এবং গোপালের সাথে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে অত্যাচারী সকল ক্ষুদ্র রাজাকে পরাভুত করে বাংলায় একটি শক্তিশালী সার্বভৌম রাজশক্তির প্রতিষ্ঠা করে। এভাবেই এ জেলায় পাল রাজ বংশের শাসন প্রতিষ্ঠিত হয়। এই রাজবংশ ৭৫০ খ্রীষ্টাব্দ পর্যন্ত সুদীর্ঘ ৪০০ বছর রাজত্ব করে।

পাল বংশীয় রাজাদের সকলেই বৌদ্ধ ছিলেন। এই সময় বাংলায় ইতিহাসে বৌদ্ধদের স্বর্ণযুগ বলা হয়। এই সময় বৌদ্ধ সভ্যতা ও সংস্কৃতির চরম উৎকর্ষ সাধিত হয়। বর্তমান যশোর জেলার বারোবাজার অঞ্চলে একটি বৌদ্ধ সংঘাবাস প্রতিষ্ঠিত ছিলো। বলা বাহুল্য তখন জেলার বেশীর ভাগ লোকই ছিলো বৌদ্ধ ধর্মালম্বী। এভাবে সহজেই অনুমান করা যায় ঐ সময় বর্তমান নড়াইল জেলা অঞ্চল বারোবাজার শাসন কেন্দ্র হতে শাসিত হতো।

পালবংশের পতনের পর হিন্দু ‘সেন’ রাজাদের শাসনামল শুরু হয়। তাদের রাজধানী ছিল ‘গৌড়’ এবং নবদ্বীপ। সেন শাসনামলে নড়াইল অঞ্চল সেন রাজ্যের বিশিষ্ট স্থান বলে মনে করা হয়। সেন রাজত্বকালে তাদের গোটা সাম্রাজ্য প্রশাসনিক সুবিধার জন্য কতকগুলি প্রদেশ বা ভুক্তিতে বিভক্ত ছিলো। নড়াইল জেলা ছিল সেন সাম্রাজ্যের বাগড়ী ভুক্তির অন্তর্ভূক্ত। এই বাগড়ী ভুক্তির শাসনকেন্দ্র ছিলো জেলার পশ্চিম দক্ষিণ কোণে চিত্রা-ভৈরবের সংগমস্থলে। বর্তমানে এটা নড়াইল উপজেলার অন্তর্ভুক্ত। স্থানটির নাম শেখহাটি।

নড়াইল জেলার দক্ষিণে নদীর তীরবর্তী শেখাহাটি গ্রাম একটি ঐতিহাসিক প্রাচীন গ্রাম। বিখ্যাত মুসলিম ঐতিহাসিক মিনহাজ উদ্দীন কর্তৃক লিখিত প্রখ্যাত ইতিহাস গ্রন্থ ‘তবকাত-ই-নাসিরী’তে এই স্থানের নাম ‘শঙ্খনদ’ নামে উল্লেখিত হয়েছে। বর্তমান শেখহাটি তৎকালীন “শঙ্খনদ” নামেরই অপভ্রংশ। শেখহাটি ও এর পার্শ্ববর্তী কয়েকটি গ্রাম নিয়ে প্রায় চার মাইল দীর্ঘ ও তিন মাইল প্রস্থ এক সমৃদ্ধ নগরী হিসেবে খ্যাত ছিলো। যশোর-খুলনার ইতিহাস লেখক ঐতিহাসিক সতীশচন্দ্র মিত্রের মতে এই শেখহাটি সেন রাজাগণের বাগড়ী প্রদেশের রাজধানী ছিলো। ভারত উপমহাদেশের দাস বংশের প্রতিষ্ঠাতা কুতুবুদ্দীন আইবেকের নির্দেশ পেয়ে জেনারেল ইখতিয়ারউদ্দীন মুহাম্মদ বিন বখতিয়ার খিলজী নবদ্বীপ আক্রমণ করলে বৃদ্ধ রাজা লক্ষণসেন নবদীপ হতে নৌকাযোগে ভৈরব নদী দিয়ে তার এই প্রাদেশিক রাজধানী শেখহাটিতে উপস্থিত হন এবং জীবনের অবশিষ্টকাল এখানে এবং ঢাকার বিক্রমপুরে অতিবাহিত করেন। ঐতিহাসিক সতীশচন্দ্র মিত্র সেন রাজাদের প্রাদেশিক রাজধানীর বিতর্কীত দাবীর সত্যাসত্য বিচারে না গেলেও বর্তমান শেখহাটি ও পাশ্ববর্তী গ্রামে যে সব নিদর্শন ছড়িয়ে আছে, তাতে যে এক সুপ্রাচীন নগরীর অস্তিত্ব সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায় তাতে সন্দেহ থাকে না।

মুসলমানদের বঙ্গবিজয়ের পর হতে শুরু করে তুর্কী পাঠান ও সুলতানী আমলে যশোর জেলা গৌড় পান্ডুয়া লক্ষণাবর্তী, সোনারগাঁও এবং দিল্লী কেন্দ্র দিয়ে আক্রমণ করলো রাজা সীতারামের দ্বিতীয় রাজধানী মুহাম্মদপুর। চুড়ান্ত যুদ্ধ সংঘটিত হলো এখানে। পরিশেষে রাজা সীতারাম ও তাঁর সেনাপতি মেনাহাতি মুঘোলদের হাতে বন্দী হলো। নাটোরের জামিদার দয়ারাম মুঘোল বাহিনীর কয়েকজন সিপাহীকে নিয়ে রাজা সীতারামকে শৃংখলিত অবস্থায় নাটোরে নিয়ে যায় এবং দিধাপাতিয়ার কারাগারে ঐ অবস্থায় বন্দী করে রাখে। পরে তাঁকে মুর্শিদাবাদে নিয়ে যাওয়া হয় এবং বিচারে মৃত্যু দন্ড হয়।

রাজা সীতারামের পতনের পর নড়াইল জেলা অঞ্চল নাটোরের রাণী ভবানির জমিদারীর অন্তর্ভূক্ত হয়। পরে নড়াইলের জমিদারের কর্তৃত্বাধীনে এই জেলা শাসিত হয়। এই সময় ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানী বাংলার দেওয়ানী লাভ করে এবং ধীরে ধীরে নড়াইল জেলাসহ গোটা বাংলার দন্ডমুন্ডের কর্তা হয়ে বসে।

ইংরেজগণ এদেশের শাসক হয়ে বসলে প্রশাসনিক সুবিধার জন্য ভারতবর্ষকে কয়েকটি ভাগে ভাগ করে ফেলে। নড়াইল বেঙ্গল প্রেসিডেন্সীর অধীনে শাসিত হতে থাকে। প্রেসিডেন্সী বিভাগের অধীনে ১৭৮১ খৃষ্টাব্দে যশোর একটি জেলারূপে আত্মপ্রকাশ করে। এর আগে ১৭৪২ সালে খুলনাকে যশোর জেলার একটি মহকুমায় পরিগণিত করা হয়। সেই সময়ে বর্তমান নড়াইল জেলার দক্ষিনাংশ খুলনা মহাকুমার শাসনাধীনে থাকে।

১৮৬১ খ্রীষ্টাব্দে নড়াইল মহাকুমা প্রতিষ্ঠিত হয়। এই মহাকুমার সদর দপ্তরের স্থান নির্বাচন নিয়ে চরম বিতর্কের সূত্রপাত হয়। লোহাগড়ার ঐশ্বর্য্য তখন বেশ প্রবল। তাই অনেকেই মহাকুমা অফিস লোহাগড়াতেই স্থাপনের পক্ষে যুক্তি প্রদর্শন করে। কিন্তু প্রভাবশালী জমিদারদের বাড়ী ঐ নড়াইলে থাকায় পরিশেষে মহকুমা সদর অফিস ঐখানেই প্রতিষ্ঠিত হয়। নড়াইল তখন থেকে মহকুমা হিসেবে শাসিত হতে থাকে। এরশাদ সরকারের আমলে নড়াইল মহকুমাকে জেলায় রূপান্তরিত করা হয়। ফলে প্রশাসনের আমূল পরিবর্তন সাধিত হয়।